Tuesday, December 17, 2013

Mong Raja (King) Mong Prue Sein, an indigenous freedom fighter


মং রাজা, একজন আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা
..............................................আবু দাউদ, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
 Courtesy:



Monday, 16 December 2013

Prince Mong Prue Sein
Courtesy: Aung San Khilu
১৯৭১ সালবাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় গৌরবের বছরনয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধজয়ের বছরসেদিন শুধু বাঙ্গালিরাই নয় যুদ্ধ করেছিলেন এদেশের পাহাড়ি তথা  আদিবাসীরাওকিন্তু স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোথাও তুলে ধরা হয়নি পাহাড়ি তথা আদিবাসীদের বীরগাঁথাএটিএন টাইমসের পক্ষ থেকে পার্বত্য খাগড়াছড়ির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে আনতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি একজন উপজাতি বীরাঙ্গনা, চারজন শহীদ আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধার কথাতাদেরই একজন মং রাজা মংপ্রু সাইন

একাত্তরের এই অকুতোভয় বীরসেনানীর অজানা কথা তুলে ধরেছেন এটিএন টাইমসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি আবু দাউদ 

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দুরের মহালছড়িই তখনকার উপজেলা হেডকোয়ার্টারসেই মহালছড়ি থেকেই প্রথমে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাধারণ মানুষজেলা সদর, রামগড়, মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ সংগঠিত হয়তবে ২৭ এপ্রিল মহালছড়ি যুদ্ধটি ছিল উল্লেখযোগ্যচেঙ্গীনদীর ওপার থেকে পাক বাহিনী আক্রমন চালায়সেদিনই মহালছড়িতেই পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধেই প্রাণ হারান ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হানাদার প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়
মুক্তিযোদ্ধোদের আশ্রয় এবং খাবার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগিরামাইসছড়ি এলাকার চিত্ত রঞ্জন চাকমা ছিলেন হানাদার প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটির সক্রিয় সদস্যমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ, খাদ্য সংগ্রহ ও সংগঠিত করা সব কাজেই তিনি ছিলেন এগিয়েআর এটিই চোখে পড়ে রাজাকারদেরতাই রাজাকাররা চিত্ত রঞ্জন চাকমাসহ স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নানা কুটকৌশল গ্রহণ করে এবং পাক আর্মিদের কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে

মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক মোবারক মাষ্টার জানান, একই রাতে মহালছড়ি বাজারসহ আশাপাশের সব পাহাড়ী ও বাঙ্গালী গ্রাম পুড়িয়ে দেয় পাক হানাদাররাএছাড়া পাক বাহিনী মহালছড়িতে আশ্রয় নেয়ার পর শুরু হয় নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডমহালছড়িতে তৎকালীণ সার্কেল অফিসারের বাসায় নারী নির্যাতনসহ পাশবিক নির্যাতন করা হতোআর সার্কেল অফিসে বসেই পরিকল্পনা করতো পাক বাহিনীর সদস্যরা

তিনি আরো জানান, অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মুক্তিকামী মানুষ ভারতে চলে গেলেও থেকে যেতে হয়েছিল চিত্তরঞ্জন চাকমাসহ আরো অনেককেসেটিই কাল হয়েছিল চিত্তরঞ্জন চাকমাসহ আরো অনেকেরপাক হানাদাররা জেলার মাইচছড়ি নিজবাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে মহালছড়ির তেলেনতাংগায় নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে চিত্তরঞ্জন চাকমাকেসমসাময়িক সময়ে পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হন ইপিআর সদস্য রমনী রঞ্জন চাকমা, গোরাঙ্গ মোহন দেওয়ান (হেডম্যান), সব্যসাচী চাকমা স্থানীয রাজাকার জাকারিয়া, জাকির বিহারী পাকসেনাদের কাছে ১২৩ জনের যে হিটলিষ্ট দিয়েছিলএসব পাহাড়ীদের নামও ছিল সেই তালিকায়
তৎকালীন মহালছড়ি আওয়ামীলীগের সংগঠক মংসাথোয়াই মাষ্টার জানান, ‘আমি সিঙ্গিনালার বন্ধু থেকে তথ্য পেয়ে ক্যাপ্টেন কাদেরকে খবর পাঠাই যে পাক বাহিনী নানিয়ারচর থেকে মুবাছড়ি হয়ে মহালছড়ি আক্রমন করতে আসছেদুদিন আগে সে সংবাদটি না পৌছালে আরো বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ হতে পারতোতিনি জানালেন, ১৭ এপ্রিল পাক বাহিনীর দেয়া আগুনে পুড়ে শহীদ হন থলিবাড়ীতে বাঅং মারমা ও রিপ্রুচাই মারমা নামের ২জন ও সিঙ্গিনালায় অজ্ঞাত এক পাহাড়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিত্ত রঞ্জন চাকমার (কার্বারী) ছেলে খাগড়াছড়ি সরকারী ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সুধীন কুমার চাকমা স্মৃতি চারণ করে বলেন, পাকসেনারা মহালছড়ি এলে জাকারিয়া নামের এক বিহারীসহ আরো বেশ কজন এদেশীয় দোসর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক ওপর নির্যাতন শুরু করেতার সহযোগিতায় আমার বাবাকে ১৩ মে সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার মাইচছড়ি বাজারে নিয়ে যায়এছাড়াও পাক হানাদাররা গোরাঙ্গ হেডম্যান ও সব্য সাচীসহ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়আধামরা অবস্থায় ঐ রাতেই পাক সৈনিকরা আমার বাবাসহ অন্যান্যদের মহালছড়ি সদরে নিয়ে যায়পরের দিন মহালছড়ি বাজারের উত্তরদিকে তেলেনতাংগা নামক এলাকায় ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে বলে শুনেছিলামবাবার লাশ তো পাই-ই নি, জান নিয়ে বেঁচে গিয়েছিলাম সেদিন

তিনি বলেন, ‘কোন স্বীকৃতি বলতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ২ হাজার টাকার একটি চেকএরপর আর কোন স্বীকৃতি পাইনিএ পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে আমার বাবাসহ অপর ৩ মুক্তিযোদ্ধার নাম স্থান পায়নিদুহাজার সালে মহালছড়ির তৎকালীন ইউএনও বিমল বিশ্বাস মহালছড়িতে একটি স্মৃতিস্তম্ভে বাবার নামটি জায়গা পাওয়াটাই এখন পর্যন্ত বড় স্বীকৃতিআমার বাবারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, সেই স্বীকৃতি আমরা চাইআর কোন চাওয়া পাওয়া নেই

সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মংসাথোয়াই চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে বাঙ্গালীদের পাশাপাশি পাহাড়ীরাও পিছিয়ে ছিলেন নাযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন ছাড়াও তারা নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেনমহালছড়িতেও অনুরূপ ৪জন পাহাড়ী শহীদ হবার কথা শুনেছিতাদের স্থানীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন

মুক্তিযুদ্ধে মং সার্কেল রাজার অবদান:

Mong (Raja) 'King's coat of arms'
মুক্তিযুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী মং সার্কেল রাজা মংপ্রু সাইনের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্যকিন্তু সে অনুযায়ী স্বীকৃতি মিলেনি মং রাজ পরিবারেরসাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মংসাথোয়াই চৌধুরী বলেন, ‘ঠিক আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে যাই, তখন মংসার্কেল রাজা মংপ্রু সাইনের অবদান ছিল অনেকরাজা রূপাইছড়িতে থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেনতিনি যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহিত করতে ফুটবল পর্যন্ত কিনে দিয়েছিলেনরাজা বলতেন, খেলো-খাও-আর ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে নাম লিখাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করো এবং দেশকে স্বাধীন করো

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মংসাথোয়াই চৌধুরী আরো জানান, স্বাধীনতার পরও আমি ১২জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে দীর্ঘ ২ বছর ধরে মং রাজ পরিবারে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেনআমার জানা মতে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মং সার্কেল রাজা তেমন কোন স্বীকৃতি পাননিমরনোত্তর হলেও রাজাকে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি

এ ব্যাপারে আরেক মু্ক্তিযোদ্ধা ফিলিপ ত্রিপুরা জানান, ‘অংশগ্রহনের দিক থেকে সংখ্যায় কম হলেও অনেক পাহাড়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বত:স্পুর্ত অংশ গ্রহণ করেছেনচিত্তরঞ্জনসহ অনেকেই শহীদ হনমংরাজার মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি (মংরাজা) মুক্তিযোদ্ধাদের রেশন দিয়েছেনখাবার দিতেনআশ্রয় দিতেনবলতে গেলে আশ্রয়দাতাও ছিলেন তিনি শরনার্থীদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই করে দিতেন রাজামুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ার দিতে না পারলেও দেশ স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সবই করেছিলেন 
...........................................................................................................................

Read more:-
৪২ বছরেও স্বীকৃতি মিলেনি মং রাজা মংপ্রু সাইন’র
.............................................................. খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি


Courtesy: pahar24.com, CHT, Saturday, 14 December 2013


Mong Raja (King) Mong Prue Sein
পার্বত্য চট্টগ্রামকে ত্রিধাবিভক্ত করেই গঠিত তিনটি সার্কেল। চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল এবং মং সার্কেল। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে চাকমা ও বোমাং সার্কেল রাজাদের তৎকালীন ভূমিকা ‘বিতর্কিত’ ও ‘সমালোচিত’ হলেও মং সার্কেল রাজা মংপ্রু সাইনের ভূমিকা’র কথা এখনো কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে খাগড়াছড়িবাসী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বিরল অবদান রেখেও সেই অবদানের স্বীকৃতি আজো মেলেনি মং রাজ পরিবারের।

সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মংসাথোয়াই চৌধুরী বলেন, ‘একথা নিঃসন্দেহে সত্য আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধে যাই, তখন মং সার্কেল রাজা মংপ্রু সাইনের অবদান ছিল অনেক। রাজা রূপাইছড়িতে থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহিত করতে ফুটবল কিনে দিতেন। রাজা বলতেন, খেলো-খাও- আর ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে নাম লিখাও। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করো এবং দেশকে স্বাধীন করো।’

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মংসাথোয়াই চৌধুরী আরো জানান, স্বাধীনতার পরও আমি ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে দীর্ঘ ২ বছর ধরে মং রাজ পরিবারে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমার জানা মতে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ মং সার্কেল রাজা তেমন কোন স্বীকৃতি পাননি। মরনোত্তর হলেও রাজাকে স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

এ ব্যাপারে আরেক মুক্তিযোদ্ধা ফিলিপ ত্রিপুরা জানান, ‘অংশগ্রহনের দিক থেকে সংখ্যায় কম হলেও অনেক পাহাড়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণ করেছেন। চিত্তরঞ্জনসহ অনেকেই শহীদ হন।

মং রাজার মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মং রাজা মুক্তিযোদ্ধাদের রেশন দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন। বলতে গেলে আশ্রয়দাতা ও পরামর্শদাতাও ছিলেন তিনি। শরনার্থীদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থাই করতেন রাজা। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র দেয়া ছাড়া দেশ স্বাধীন করার জন্য যা যা করা সবই করেছিলেন তিনি।’

খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা এবং সচেতন মানুষ মনে করেন, পাহাড়ের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে আনতে এবং যে স্বল্প সংখ্যক পাহাড়ী মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ ও অবদান রেখেছে তাদের মধ্যে মং রাজা ছিলেন অন্যতম। তাই এই রাজার সেই সময়কার গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতি দেয়া জরুরি।

No comments:

Post a Comment