Thursday, January 30, 2014

The British Government taken away the hill people's political rights- MN Larma


Source: parbattanews.com, 28 January, 2014, Link: http://parbattanews.com/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B6-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC/#.UuqQdPu3jIW

..........................................................................................................................................
‘ব্রিটিশ সরকার পার্বত্যবাসীর রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে’- মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা


সমস্যার সূত্রপাত যেখান থেকে
১৯৪৭ সালে রেডক্লিফ কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের কর্তৃত্বে ন্যস্ত এবং পার্বত্য জনগোষ্ঠীর একাংশ এর বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করে১৯৪৭ সালের শুরু থেকে ভারত বিভাগ পর্যন্ত সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক উপজাতীয় নেতা দিল্লী, বোম্বে (মুম্বাই) ও কলকাতা সফর করেছিলেনএদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন নেতা কংগ্রেসের এম.কে. গান্ধী, বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, শ্যামা প্রসাদ প্রমুখের সঙ্গে দেখা করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পূর্ব বাংলা ও বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছিলেনএ সময় কংগ্রেস নেতা এ.বি. ঠক্করসহ অন্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিধি দল নিয়ে এসে সেখানকার উপজাতীয়দের ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হবার জন্য প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালায়এদিকে কংগ্রেস ভারতের পক্ষে আরও অনেক সুযোগ রেডক্লিফের সীমানা কমিশন থেকে হাতিয়ে নেওয়া এবং অন্যদিকে মুসলিম লীগের প্রবল বিরোধিতার মুখে পার্বত্য চট্টগ্রামকে সরাসরি ভারতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি১৯৪৬ সালে পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চাকমা উপজাতীয় নেতারা ’The Hillman Association’ গঠন করে বৃটিশ কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি ওঠান যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে একান্তই ভারতের অন্তর্ভুক্তি করা সম্ভব না হলে যেন কুচবিহার, ত্রিপুরা, খাসিয়ার ন্যায় রাজা শাসিত রাজ্যগুলোর সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুড়ে একটি আলাদা কনফেডারেশন গঠন করা হয়, যেটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক শাসিত হবে

পাকিস্তান আমলে সরকারের যে পদক্ষেপ পাহাড়িদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল সেটা হচ্ছে ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণএর ফলে ২৫০ বর্গমাইল এলাকা জলমগ্ন হয় আর ৫৫,০০০ একর আবাদযোগ্য জমি ডুবে যায়এর ফলে ১৯৬৪ সালের দিকে লংগদু, বরকল ও বাঘাইছড়ি থানার অসংখ্য পাহাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায় বর্তমানে হ্রদ এলাকার ওপর ফসলি জমির পরিমাণ ২১,৫২২ একর আর জলেভাসা জমির পরিমাণ প্রায় ১৫,০০০ একরসংশ্লিষ্টরা বলছেন যে, জলেভাসা জমিতে চাষের কাজ চললেও সেটা নির্ভর করে বাঁধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মর্জি আর প্রকৃতির ওপর১৯৭৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর আই চৌধুরী উপজাতিদেরদের সমস্যার ওপর একটি জরিপ চালানজরিপে দেখা যায় যে, ৬৯ শতাংশ চাকমাদের ধারণা কাপ্তাই বাঁধ তাদের জন্য খাদ্য ও অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি করেছেযদিও বিস্ময়করভাবে তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তিনি দেশ স্বাধীন হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মানতে অস্বীকার করে পাকিস্তানে চলে যান এবং আমৃত্যু পাকিস্তানে মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেন

১৯৬২ সালে এক সাংবিধানিক সংশোধনী বলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ অঞ্চলেরবদলে উপজাতীয় অঞ্চল’ (Tribal Area) হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বছরই মার্কসীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ পাহাড়ি ছাত্র সমিতিপ্রতিষ্ঠিত হয়১৯৬৪ সালে গোত্রীয় অঞ্চলেরবিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়, তদুপরি বিধি ১৯০০ কার্যকর রাখা হয়
১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্ট বিধি ১৯০০ এবং ৫১ ধারাকে অসাংবিধানিকহিসেবে আখ্যায়িত করে এবং জেলা প্রশাসকের অ-উপজাতি বহিষ্কারের ক্ষমতা রহিত করা হয়৩৪ ধারা সংশোধন করা হয়১৫ বছর যাবত বসবাসকারী অ-উপজাতীয় জনগণকে সম্পত্তি সংরক্ষণের অধিকার দেয়া হয়

১৯৪৬ সালের রেডক্লিফ রোয়েদাদ অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব বাংলার সঙ্গে যুক্ত থেকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে আজ অবধি চাকমা নেতারা বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারেনিষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ প্রকল্প সৃষ্ট সমস্যার সমাধান প্রয়াস সত্ত্বেও, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কাজ সত্ত্বেও চাকমা নেতারা নিজেদের এ অঞ্চলের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত করেনি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধিতাও সেজন্য ঘটেছে তাদের পক্ষ থেকে

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের ০৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের সমস্যার কথা বলেন মুজিব তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মানিকছড়ির রাজা মং প্রু সাইনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি পাহাড়ি প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেনকিন্তু নির্ধারিত সময়ে জরুরি কাজে তিনি বাইরে থাকায় বঙ্গবন্ধুর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়নি

গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেনসে সময় তিনি মার্কসবাদী পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন১৯৬৬ সালে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন উপজাতীয় ছাত্র সমিতি১৯৬৯ সালে এর কার্যালয় স্থানান্তরিত করা হয় রাঙ্গামাটিতে১৯৭২ সালের মার্চ মাসে মানবেন্দ্র লারমা গঠন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিযেটি ছিল মূলত মার্কসবাদী রাজনৈতিক দল রাঙ্গামাটি কমিউনিস্ট পার্টির বাহ্যিক রূপপ্রীতি কুমার চাকমার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৭২ সালেতরুণ উপজাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তিনি পাহাড়িদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং গড়ে তোলেন পাহাড়ি ছাত্র সমিতি

১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল গণপরিষদ সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাদেও ৪দফা দাবি উত্থাপন করেনবাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের শাসনতান্ত্রিক অধিকার দাবির আবেদনপত্রশীর্ষক দাবিনামায় বলা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী শাসনতন্ত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসনতান্ত্রিক অধিকার যাতে গৃহীত হয়, তজ্জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি প্রতিনিধিদল ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ ইংরেজী তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন

আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এই স্মারকলিপিখানি মনে-প্রাণে সমর্থন করি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভাবী শাসনতন্ত্রের নবজীবনের প্রতীক্ষায়রয়েছি

স্মারকলিপিতে চারটি বিষয়উত্থাপন করা হয়েছে-
পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে এবং ইহার একটি নিজস্ব আইন পরিষদ থাকিবে
উপজাতীয় জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির’’ ন্যায় অনুরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকবে
উপজাতীয় রাজাদের দফতর সংরক্ষণ করা হবে
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয় নিয়ে কোন শাসনতান্ত্রিক সংশোধন বা পরিবর্তন যেন না হয়, এরূপ সংবিধি ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে থাকবে

স্মারকলিপিতে বর্ণিত চারটি বিষয়যে আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি, তজ্জন্য আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছিএক কথায় বলতে গেলে চারটি বিষয়হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জাতীয় অস্তিত্বের চাবিকাঠিনিজস্ব আইন পরিষদ একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পরিণত করার জন্য আমরা আমাদের দাবি উত্থাপন করছিবছরকে বছর ধরে ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ আমলের দিন থেকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ধ্বংসের দিন পর্যন্ত আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীরা খুবই দুর্বিসহ জীবন যাপন করেছি; যার ফলে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে এবং আমাদের জাতীয় উন্নতি ব্যাহত হয়েছেপার্বত্য চট্টগ্রাম একটি পৃথক শাসিত অঞ্চলকিন্তু ভাগ্যের এমন নির্মম পরিহাস যদিও পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশে উপজাতীয় জনগণের আবাসভূমিহিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল তথাপি বাস্তবে ইহা মিথ্যা এবং প্রহসন ছাড়া আর কিছুই ছিল না

বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি পৃথক শাসিত অঞ্চল রূপে রাখার জন্য শাসনের সুবিধার্থে আইন প্রয়োগের জন্যে ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিঘোষণা করেনএই শাসনবিধি পুরোপুরি ত্রটিপূর্ণএই শাসনবিধি একটি অগণতান্ত্রিক শাসনবিধিএই শাসনবিধিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিনিধিত্বের কোন বিধি ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি বাংলাদেশের গভর্নরের হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে এই শাসনবিধি দ্বারাগভর্নর খুবই ক্ষমতাশালীতিনি যে কোন সময়ে যখন মনে করেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সুশাসন ও শান্তির পক্ষে ইহা প্রয়োজন, উপযোগী এবং উপযুক্ত, তখন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন প্রয়োগ করেন, নতুন রুলস ও রেগুলেশন বাতিল করেনতিনি এতই শক্তিশালী যে, স্বেচ্ছামূলকভাবে তিনি অনেক কিছু করতে পারেন তিনি কোনও আইন পরিষদের নিকট জবাবদিহি হতে বাধ্য ননগভর্নর হলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন পরিষদগভর্নর আইন প্রণয়ন করে এবং তার জেলা প্রশাসন ইহা কার্যকরী করেনফলে পৃথক শাসিত অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের শাসন ব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে পড়েসর্বক্ষেত্রে আগের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পিছিয়ে পড়ে থাকলো

ব্রিটিশ সরকার আমাদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেপার্বত্য চট্টগ্রামের হতভাগ্য জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেজনগণের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেবার জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি অদ্ভুত অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবর্তন করেজনগণ গভর্নর ও তার প্রশাসনের দয়ার উপর নির্ভর করে বাস করতে থাকেপার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে বঞ্চিত করে ব্রিটিশ সরকার বাইরের মানুষকে প্রশাসন বিভাগে নিয়োগ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসন কার্য্য চালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে এবং এইভাবে কালক্রমে বহিরাগতদের প্রভাব জেলা প্রশাসনে প্রধান্য লাভ করেব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র অর্থাৎ বাজার, নদীবন্দর প্রভৃতি সমস্ত ব্যবসায়ী কেন্দ্র সমূহ বহিরাগতদের হাতে চলে যায় এইরূপ রাজনৈতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ জেলা প্রশাসন থেকে চ্যুত হয় এবং দূরে সরে পড়ে থাকতে বাধ্য হয়, অর্থনৈতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বহিরাগত ব্যবসায়ীদের শোষণের শিকারে পরিণত হয়

ব্রিটিশ সরকারের ন্যায় পাকিস্তান সরকারও পার্বত্য চট্টগ্রামের হতভাগ্য জনগণকে রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক শোষণ থেকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে আসেননিবরঞ্চ পক্ষান্তরে স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে পৃথক শাসিত অঞ্চলের সত্তাকে চিরতরে লুপ্ত করে দিবার পথ প্রশস্ত করে দেয়অন্যায় অবিচার সমগ্র জেলায় চরম নৈরাশ্য ও ভীতির রাজত্ব সৃষ্টি করে কাপ্তাই বাঁধের ফলে ৯৯ হাজার ৯শত ৭৭ জন মানুষ ১৯৬০ সালে গৃহহারা, জমিহারা হয়ে যায়সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও উপযুক্ত পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা বাস্তবায়িত করেনিস্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মতামত যাচাই না করে ১৯৬৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের পৃথক শাসিত অঞ্চলের সত্তাকে চিরতরে ঘুচিয়ে দিবার জন্য পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একটি শাসনতান্ত্রিক সংশোধনী প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেয়স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের অগণতান্ত্রিক এবং নিপীড়নমূলক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ প্রতিবাদ করতে পারেনিসুতরাং শেষ পর্যন্ত অনন্যোপায় হয়ে জন্মভূমি চিরতরে ত্যাগ করে প্রায় পঞ্চাশ হাজার নর-নারী ১৯৬৪ সালে ভারতে আশ্রয় পাবার আশায় সীমান্ত পাড়ি দেয়

বেআইনী অনুপ্রবেশ পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পায়১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনসংখ্যা ছিল ৯৪.৪৭%, অমুসলমান ২.৫৯% এবং মুসলমান ২.৯৪%মুসলমান ও অমুসলমান জনসংখ্যার কিছু অংশ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিম বাসিন্দা আর বাদবাকী অংশ ছিল বাইরে থেকে আগত ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মচারীবৃন্দকিন্তু গত চব্বিশ বছরে বহিরাগতদের সংখ্যা অসম্ভবরকমভাবে বেড়ে যায়পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ বারবার পাকিস্তান সরকারকে এই বেআইনী অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেবার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করেবহিরাগতদের দ্বারা বেআইনী জমি বন্দোবস্তী ও বেআইনী জমি বেদখল তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিঅনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনও রকমের বন্দোবস্তী বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছেকিন্তু গভর্নর এবং তার জেলা প্রশাসন এই শাসনবিধিকে কার্যকরী করেনিপক্ষান্তরে গভর্নর এবং তার জেলা প্রশাসন বহিরাগতদেরকে বেআইনী জমি বন্দোবস্তী ও বেআইনী জমি বেদখলের পথ নীরবে খুলে দেয়১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিবেআইনী অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে পারেনি, পারেনি বেআইনী জমি বন্দোবস্তী ও বেআইনী জমির বেদখল বন্ধ করে দিতেএই শাসনবিধি অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের পৃথক শাসিত অঞ্চলের সত্তা জনগণের যুগ যুগ ধরে পিছিয়ে পড়ে থাকার অবস্থার কোনও পরিবর্তন এনে দিতে পারেনিকালক্রমে এই পৃথক শাসিত অঞ্চলের সত্তা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিকট অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়

জনগণের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে শাসন ব্যবস্থা ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা যাবে নাএই জন্যই আমরাচারটি বিষয়উত্থাপন করে নিজস্ব আইন পরিষদ সম্বলিত একটি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি তুলে ধরেছিসুতরাং-

ক) আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সমেত পৃথক অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পেতে চাই
খ) আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার থাকবে, এরকম শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন চাই
গ) আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষিত হবে এমন শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন চাই
ঘ) আমাদের জমি স্বত্বÑজুম চাষের জমি ও কর্ষণযোগ্য সমতল জমির স্বত্ব সংরক্ষিত হয় এমন শাসন ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই
ঙ) বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেন কেহ বসতি স্থাপন করতে না পারে তজ্জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার প্রবর্তন চাই

আমাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত দাবিবছরকে বছর ধরে ইহা একটি অবহেলিত শাসিত অঞ্চল ছিলএখন আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে গণতান্ত্রিক পৃথক শাসিত অঞ্চল অর্থাৎ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে বাস্তবে পেতে চাইভারত তার বিভিন্ন জাতিসমূহের সমস্যাসমূহ সমাধান করেছে ভারতের জাতিসমূহ- বড় বা ছোট সকলে শাসনতান্ত্রিক অধিকার পাচ্ছেভারতের জাতিসমূহ ক্রমান্বয়ে ইউনিয়ন টেরিটরি এবং রাজ্য পর্যায়ের মর্যাদার অধিকারী হতে চলেছেসোভিয়েত ইউনিয়নও তার জাতিসমূহের সমস্যার সমাধান করেছেসোভিয়েত ইউনিয়ন সকল জাতিসমূহকে শাসনতান্ত্রিক মর্যাদা দিয়েছে এবং গোটা সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইউনিয়ন রিপাবলিক, স্বায়ত্তশাসিত রিপাবলিক, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও জাতীয় অঞ্চলে বিভক্ত করে জাতিসমূহের সমস্যার সমাধান করেছে

পাকিস্তান সরকার আমাদিগকে নির্মমভাবে নিপীড়ন করেগত চব্বিশ বছর আমরা সকল মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলামরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিষয়ে আমরা আগের মতো পিছিয়ে পড়ে রয়েছিএখনও আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ অর্ধ নগ্ন পরিবেশে বাস করছে, এখনও হাজার হাজার মানুষ আদিম যুগের পরিবেশে বাস করছে

এখন নিপীড়নকারী, স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের দিন আর নেইআমরা স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের সর্বরকমের নিপীড়ন ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়েছিআমাদের বাংলাদেশ এখন মুক্তউপনিবেশিক শাসনের জোয়াল ভেঙ্গে গেছে এখন আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ চারটি মূলনীতিÑগণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেআমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশের ভাই- বোনদের সাথে একযোগে এগিয়ে যেতে চাইপার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ মনে করে এবং বিশ্বাস করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের যুগযুগান্তরের অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জাতীয় অস্তিত্বের সংরক্ষণের অধিকার দেবেন
 
জয় বাংলা!
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা
গণ পরিষদ সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটিবাংলাদেশ
এবং আহবায়ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি
তারিখ- ২৪ এপ্রিল ১৯৭২ সন
[সূত্রঃ পাক্ষিক চিন্তা ৩১ মার্চ ১৯৯৮]

Saturday, January 11, 2014

Wednesday, January 1, 2014

Special interview of Sudha Sindhu Khisa

Courtesy: pahar24.com, Tuesday, December 31, 2013
Shree Sudha Sindhu Khisa, president of PCJSS, member of CHT Regional Council and individual candidate of the tenth national parliament election from 299 Rangamati hill district
....................................................................................................................