Ramu, stories of the dark
Syed Badrul Ahsan
Courtesy: The Daily Star, Dhaka, Monday, September 30, 2 013
There is yet no news of Uttam Barua. Even a year after Islamist fanatics
vandalised Buddhist temples in Ramu and other areas in the south-east of the
country and weeks after the inauguration of the renovated temples by the prime
minister, the young man remains missing.
The bigger surprise is that no one in the corridors of power is worried about
his disappearance, about whether he is dead or alive. Only his family waits, in
worry and fear. Uttam Barua’s father breaks into tears. Hardly anyone pays
attention to the pain that eats away at him.
What happened to the Buddhist community last year was but a lengthening of the
sinister shadows that have regularly come over the religious minorities in
Bangladesh. In a free, professedly secular Bangladesh, it was not supposed to
be this way, for it was Bangalee nationalism which propelled the masses, in the
brief five years between 1966 and 1971, toward the attainment of a non-communal
political entity. It was supposed to be a nation for all Bangalees– across
caste, creed, politics and social standing.
Given what happened in Ramu, given the ferocity with which communalism is being
fanned in the country, the fear holds that a land of communal harmony has lost
touch with its founding principles.
The facts are revealing of the reality. The Hindu population of the country is
on a decline. Something is happening, quietly and imperceptibly, to push the
community out of the country, into countries beyond our frontiers. The pattern,
of course, was set through the partition of 1947, when millions of Hindus and
Muslims left ancestral homes because of their faith. Tens of thousands lost
their lives, on the eastern and western ends of what till then constituted
British-ruled India.
Thereafter, a fresh bout of communal disturbances in 1950 forced another large
group of Hindus to leave East Bengal for India. In that group were some of the
very best of the community — teachers, artistes, upcoming writers. In a
communal Pakistan, it was made clear non-Muslims had little or no place.
Fast forward to 1964, when the chaos at the Hazratbal shrine in distant Kashmir
encouraged the Ayub Khan-Monem Khan clique here in a yet to be Bangladesh to
fan the flames of a fresh new communal riot. Thousands of Hindus who had braved
the chaos of the 1950s did not feel confident enough to stay back in a country
that had historically been home to them. They left. Among them were, once more,
many of the brightest of men and women in the community. Their departure left a
gaping vacuum — and a gaping wound — in our nationalistic conscience.
The India-Pakistan war of September 1965 led to a further exodus of Hindus from
this land. The ruling circles of Pakistan then committed a most despicable deed
— they fashioned the infamous Enemy Property Act to prevent any Hindu from
legally dispensing with his possessions and moving on. In time, in Bangladesh,
a euphemistic turn was given to the questionable law. It became the Vested
Property Act. When today the Hindu community demands changes to the law, the
bureaucracy squirms.
The legacy of communalism continues to eat away into the vitals of this nation.
The country’s Christians are a depleted lot; its Buddhists, for all the
renovation of temples and monasteries in Ramu and Ukhia, do not believe they
can trust their Muslim neighbours or the state any more. Despite the foreign
minister’s inexplicable assertion that there are no indigenous people in
Bangladesh, the truth remains, and remains bitter: everything is being done to
deprive our indigenous population of traditional rights to their hearths and
homes and to their culture. The hills were once their home. Today the hills are
a nightmare they live through.
A few days ago, a middle-aged Muslim cleric, in an enthusiastic sermon at a
milad, prayed that the Almighty turn all Hindus, all Christians and all
Buddhists of Bangladesh into Muslims. His audience nodded in approval.
It was a worrying sign of how history and heritage could mutate into
all-encompassing fanaticism. It evoked dark memories of the destroyed Buddhas
at Bamiyan at the hands of the Taliban, of the razed Kali Mandir at Suhrawardy
Udyan per courtesy of the Pakistan army.
......................................................................................................
"A year of the Ramu attack" Written by Pragyananda Vikhsu, Assistant-director of Kendriya Seema Bouddha Bihara, Ramu, Cox-bazar.
রামু সহিংসতার এক বছর
রহস্য এখনো অনুদ্ঘাটিত
প্রথম
আলো, সম্পাদকীয়, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৩ |
http://www.eprothomalo.com/index.php?opt=view&page=1&date=2013-09-29#
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত। কেউ ঘুমের ঘোরে মগ্ন, কেউ তখনো জেগে আছে। বৌদ্ধবিহারের নিরপরাধ নিরীহ ভিক্ষু শ্রামণেরা নিরাপদ স্থানে
পালিয়ে যাচ্ছে। গৃহবাসীরা গৃহ
ছেড়ে পালাচ্ছে। চারদিকে ধুমধাম, মার মার কাট কাট আওয়াজ। বড়ুয়াদের গালে গালে, জুতা মারো তালে তালে; বড়ুয়াদের চামড়া,
তুলে নেব আমরা—এমন অনেক
সাম্প্রদায়িক স্লোগানে প্রকম্পিত বৌদ্ধ জনপদ। আগুনের লেলিহান
শিখায় দগ্ধ হচ্ছে বিহার, বুদ্ধমূর্তি,
ত্রিপিটক, নিদর্শন, ঐতিহ্য, পূজার থালা—সবকিছু। সম্প্রীতির গায়ে কখন যে আগুন লেগে গেল কেউ বুঝতেই পারল না। ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া, টেকনাফ, পটিয়ায় একই
ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। হতবাক বাংলাদেশ!
শুরুটা রামু থেকে হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সহিংসতার মাত্রা রামুতে বেশি হয়েছিল বলেই নাম বনে গেল রামু সহিংসতা। এখন রামু সহিংসতা বললে সবাই বোঝে,
এর মানে কী। ঘটনার পরবর্তী সরকারি উদ্যোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধবসতিগুলো দ্রুত পুনর্নির্মাণ, পুনর্বাসন, নিরাপত্তা জোরদার, আক্রান্ত এলাকাগুলোতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একাধিকবার আগমন, ক্ষতিগ্রস্ত
ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো, ইত্যাদি পদক্ষেপ
নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণে এবং আতঙ্ক, ভয়, আস্থাহীনতা কমিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা
পালন করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং
তাঁর সরকারের এমন মানবিক ভূমিকা ও আন্তরিকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরাও খুব খুশি। দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সরকার এর জন্য প্রশংসার দাবি রাখে। বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী ১৭ ইসিবি এসডব্লিউও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কেবল তাঁদের দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে নয়, সঙ্গে আন্তরিকতার অভাব ছিল না বলেই কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা নবনির্মিত
বিহারগুলোতে পূজা, বন্দনা ও উপাসনা শুরু করেছেন। আগের মতো দেশ ও বিশ্বশান্তি কামনায়
প্রার্থনাও হচ্ছে পুরোদমে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
পাশাপাশি জাতি-ধর্ম-দল-মতনির্বিশেষে
দেশবাসী যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তা
অভূতপূর্ব এবং বিরল এক ঘটনা। দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল, অনলাইন পত্রিকা,
দৈনিক পত্রপত্রিকা, গণমাধ্যমের
কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে
স্মরণ করতে হয়। টিভি চ্যানেলগুলো সর্বোচ্চ প্রচারণা চালিয়ে গেছে। অনেক লেখক
গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।
দুই
২৯ সেপ্টেম্বরের আগে এবং রামুর বৌদ্ধবিহার পুরাকীর্তি ও নিদর্শনগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে টানত। পুনর্নির্মিত বিহারগুলোও পর্যটকদের কাছে টানবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিহারগুলোতে অমূল্য যে সম্পদ ছিল, সেগুলোর আর দেখা মিলবে না। পুরো বিহারেই ফাঁকা ফাঁকা পরিবেশ বিরাজ করছে। নেই কোনো প্রাচীনত্বের ছাপ। আগে বিভিন্ন নিদর্শন ঐতিহ্য নিয়ে কত কথা হতো। এখন শুধু পর্যটক এলে ছবি তোলেন, একটু বিনোদন নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে বলেন, বিহার পুড়ে আপনাদের অনেক লাভ হয়েছে। এখন কোটি কোটি টাকার দামি পাকা দালান বিহার হয়েছে। অপমান আর মানসিক জ্বালা নিয়ে মাথা নিচু করে থাকা ছাড়া তাঁদের প্রতি কী-ই বা বলার থাকে। বলার প্রয়োজনবোধও করি না। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে আসা বুদ্ধমূর্তিগুলো ভাগে দুইটা করে পাওয়া গেছে। থাইওয়ান থেকে প্রচুর ধর্মীয় গ্রন্থ পাওয়া গেছে। প্রথম আলো পাঠাগার সৃষ্টিতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সংরক্ষিত পবিত্র ধাতু, পুঁথিপত্র বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য ত্রিপিটকখণ্ড চিরতরে হারিয়ে গেল।
২৯ সেপ্টেম্বরের আগে এবং রামুর বৌদ্ধবিহার পুরাকীর্তি ও নিদর্শনগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে টানত। পুনর্নির্মিত বিহারগুলোও পর্যটকদের কাছে টানবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বিহারগুলোতে অমূল্য যে সম্পদ ছিল, সেগুলোর আর দেখা মিলবে না। পুরো বিহারেই ফাঁকা ফাঁকা পরিবেশ বিরাজ করছে। নেই কোনো প্রাচীনত্বের ছাপ। আগে বিভিন্ন নিদর্শন ঐতিহ্য নিয়ে কত কথা হতো। এখন শুধু পর্যটক এলে ছবি তোলেন, একটু বিনোদন নেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেকে বলেন, বিহার পুড়ে আপনাদের অনেক লাভ হয়েছে। এখন কোটি কোটি টাকার দামি পাকা দালান বিহার হয়েছে। অপমান আর মানসিক জ্বালা নিয়ে মাথা নিচু করে থাকা ছাড়া তাঁদের প্রতি কী-ই বা বলার থাকে। বলার প্রয়োজনবোধও করি না। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে আসা বুদ্ধমূর্তিগুলো ভাগে দুইটা করে পাওয়া গেছে। থাইওয়ান থেকে প্রচুর ধর্মীয় গ্রন্থ পাওয়া গেছে। প্রথম আলো পাঠাগার সৃষ্টিতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সংরক্ষিত পবিত্র ধাতু, পুঁথিপত্র বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য ত্রিপিটকখণ্ড চিরতরে হারিয়ে গেল।
স্বর্ণমূর্তি, রৌপ্যমূর্তি, ব্রোঞ্চমূর্তি, শ্বেতপাথরের মূর্তি, পিতলের মূর্তিসহ বিভিন্ন আকারের অসংখ্য বুদ্ধমূর্তির জন্য মিনি মিউজিয়ামের মতো ছিল কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের সংগ্রহশালা। উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহার, চেরাংঘাটা বড় ক্যাং এবং শ্রীকূল মৈত্রী বিহারেও অনেক বুদ্ধমূর্তি ছিল। দেশ-বিদেশ থেকে পাওয়া গুরু ভান্তের (সত্যপ্রিয় মহাথের) সুদীর্ঘ ৬০ বছরের অর্জন অসংখ্য মানপত্র, ক্রেস্ট, অভিধা, দুর্লভ উপহারসামগ্রী, সনদ—এসব আর ফিরে পাওয়ার মতো নয়। যাঁদের বসতবাড়ি পুড়েছে, তাঁদেরও অনেকের আপনজনদের স্মৃতিচিহ্ন মুছে গেছে। এই ক্ষতিগুলো কি কখনো পূরণ হয়? সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য যা করেছে, তা এককথায় অনন্য অসাধারণ একটি কাজ করেছে। তার পাশাপাশি বিহারগুলোর ভেতরের শূন্যতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে নবনির্মিত বিহারগুলোর ঘাটতি কিছুটা লাঘব হতো। বিহারগুলোতে অপূরণীয় সম্পদের পাশাপাশি পূরণীয় অনেক সম্পদও ছিল।
তিন
ঘটনার পরবর্তী রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। মামলায় ১৫ হাজারেরও বেশিসংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আটক হন। এক শতাধিক ব্যক্তি আটকাবস্থা থেকে মুক্তি পান। ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ সাতটি মামলার চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ৩৬৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অবশিষ্ট ১২টি মামলার চার্জশিট প্রক্রিয়াধীন। একজন বৌদ্ধভিক্ষু হিসেবে হামলা, মামলা, আটক, থানা, পুলিশ, আসামি—এসব নিয়ে মাতামাতি করা ভিক্ষুজীবনের নীতিবিরুদ্ধ কাজ। বৌদ্ধভিক্ষুদের ধ্যানাসনে ছাড়া অন্য কোথাও শোভা পায় না। এমনকি সিংহাসনেও না। ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘৭ মামলার প্রধান আসামিদের অভিযোগপত্রে নাম নেই’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুলিশসূত্রে জানা গেছে, সাত মামলায় যাঁরা প্রধান আসামি ছিলেন, তাঁদের নাম অভিযোগপত্রে নেই।’ ২ সেপ্টেম্বরের প্রথম আলোর আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাত মামলায় অভিযুক্ত ৩৬৪ জন আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। হামলার সময় পুলিশের হাতে আটক লোকজনই মামলার আসামি হয়েছে।’ ১৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় ‘১২ মামলা নিয়ে পুলিশ বিপাকে’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ আমরা বারবার বলে আসছি যে নির্দোষ কোনো ব্যক্তি যাতে শাস্তি ও হয়রানির শিকার না হয়। এটা হলে সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। রামু সহিংসতা দলীয় মনোভাব থেকে হয়নি। ঘটনার পরবর্তী আত্মরক্ষা এবং ব্যক্তিস্বার্থে দলের লেবাস ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ, ভিডিও ফুটেজ, ছবি, জবানবন্দি, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পুলিশকে এগোতে হবে। পুলিশের বাকি ১২টি মামলার চার্জশিট যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে পূর্ণ সতর্কতা প্রয়োজন। অভিযোগপত্র একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটা পূর্ণ নিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে পুলিশেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশের কাজে প্রভাব বিস্তার না করলে পুলিশ শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারবে। রামুর বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়ার করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পরিকল্পনার ছক কারা, কোথায়, কখন এবং কীভাবে করেছিল, তা নির্ধারণ করা যায়নি। অর্থাৎ ঘটনার মূল হোতা কারা, তা শনাক্ত করা যায়নি। অথচ ঘটনার পর থেকেই এক দল আরেক দলকে, এক নেতা অপর নেতাকে দোষারোপ করে আসছেন। ঘটনার নেপথ্যে রাঘব বোয়ালেরা যদি চিহ্নিতও না হন, তাহলে চার্জশিট গঠন হচ্ছে কাদের বিরুদ্ধে এবং বিচার হবে কাদের? পরিকল্পিতভাবে যাঁরা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তাঁরা আসলেই কৌশলী ও মেধাবী। তাঁরা অনায়াসে সফলও হয়েছেন এবং এখন পারও পেয়ে যাচ্ছেন। সন্দেহের ভিত্তিতে ১৫ হাজার মানুষকে আসামি করা ও ধরপাকড় করার চেয়ে পরিকল্পনাকারী ও চক্রান্তকারীদের আবিষ্কার করতে পারলে ঘটনার মূল শিকড়ে পৌঁছানো যেত। ঘটনার মূল হোতা কারা, সেদিন স্থানীয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল কেন, এতটা সময় পেয়ে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাসময়ে পদক্ষেপ নিতে পারল না কেন? এসব প্রশ্নের সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা নিজেদের এখনো নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। ঘটনার এক বছর কেটে গেল কিন্তু ঘটনার রহস্য এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে। নিরাশ হওয়ারই কথা।
ঘটনার পরবর্তী রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়। মামলায় ১৫ হাজারেরও বেশিসংখ্যক মানুষকে আসামি করা হয়। পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আটক হন। এক শতাধিক ব্যক্তি আটকাবস্থা থেকে মুক্তি পান। ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ সাতটি মামলার চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় ৩৬৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অবশিষ্ট ১২টি মামলার চার্জশিট প্রক্রিয়াধীন। একজন বৌদ্ধভিক্ষু হিসেবে হামলা, মামলা, আটক, থানা, পুলিশ, আসামি—এসব নিয়ে মাতামাতি করা ভিক্ষুজীবনের নীতিবিরুদ্ধ কাজ। বৌদ্ধভিক্ষুদের ধ্যানাসনে ছাড়া অন্য কোথাও শোভা পায় না। এমনকি সিংহাসনেও না। ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘৭ মামলার প্রধান আসামিদের অভিযোগপত্রে নাম নেই’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পুলিশসূত্রে জানা গেছে, সাত মামলায় যাঁরা প্রধান আসামি ছিলেন, তাঁদের নাম অভিযোগপত্রে নেই।’ ২ সেপ্টেম্বরের প্রথম আলোর আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সাত মামলায় অভিযুক্ত ৩৬৪ জন আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেউ নেই। হামলার সময় পুলিশের হাতে আটক লোকজনই মামলার আসামি হয়েছে।’ ১৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় ‘১২ মামলা নিয়ে পুলিশ বিপাকে’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।’ আমরা বারবার বলে আসছি যে নির্দোষ কোনো ব্যক্তি যাতে শাস্তি ও হয়রানির শিকার না হয়। এটা হলে সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর হবে। রামু সহিংসতা দলীয় মনোভাব থেকে হয়নি। ঘটনার পরবর্তী আত্মরক্ষা এবং ব্যক্তিস্বার্থে দলের লেবাস ব্যবহার করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ, ভিডিও ফুটেজ, ছবি, জবানবন্দি, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পুলিশকে এগোতে হবে। পুলিশের বাকি ১২টি মামলার চার্জশিট যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেদিকে পূর্ণ সতর্কতা প্রয়োজন। অভিযোগপত্র একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটা পূর্ণ নিরপেক্ষতার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে পুলিশেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। পুলিশের কাজে প্রভাব বিস্তার না করলে পুলিশ শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারবে। রামুর বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়ার করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পরিকল্পনার ছক কারা, কোথায়, কখন এবং কীভাবে করেছিল, তা নির্ধারণ করা যায়নি। অর্থাৎ ঘটনার মূল হোতা কারা, তা শনাক্ত করা যায়নি। অথচ ঘটনার পর থেকেই এক দল আরেক দলকে, এক নেতা অপর নেতাকে দোষারোপ করে আসছেন। ঘটনার নেপথ্যে রাঘব বোয়ালেরা যদি চিহ্নিতও না হন, তাহলে চার্জশিট গঠন হচ্ছে কাদের বিরুদ্ধে এবং বিচার হবে কাদের? পরিকল্পিতভাবে যাঁরা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তাঁরা আসলেই কৌশলী ও মেধাবী। তাঁরা অনায়াসে সফলও হয়েছেন এবং এখন পারও পেয়ে যাচ্ছেন। সন্দেহের ভিত্তিতে ১৫ হাজার মানুষকে আসামি করা ও ধরপাকড় করার চেয়ে পরিকল্পনাকারী ও চক্রান্তকারীদের আবিষ্কার করতে পারলে ঘটনার মূল শিকড়ে পৌঁছানো যেত। ঘটনার মূল হোতা কারা, সেদিন স্থানীয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল কেন, এতটা সময় পেয়ে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাসময়ে পদক্ষেপ নিতে পারল না কেন? এসব প্রশ্নের সমাধান না হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা নিজেদের এখনো নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। ঘটনার এক বছর কেটে গেল কিন্তু ঘটনার রহস্য এখনো অন্ধকারে রয়ে গেছে। নিরাশ হওয়ারই কথা।
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু: সহকারী পরিচালক, কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধবিহার।
No comments:
Post a Comment